২০২১ সালের ১৩ই অক্টোবর কুমিল্লায় মুসলিমদের আক্রমণে নিহত দিলীপ কুমার দাসের কন্যার বক্তব্য


 

আজ ১৩ অক্টোবর

কুরআন অবমাননার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৩ই অক্টোবর বুধবার সকালে প্রথমে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়। এরপর আরও বেশকিছু পূজামণ্ডপে হামলা করা হয়। নানুয়া দীঘি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শহরের চকবাজার এলাকায় (কাপুড়িয়াপট্টি) শত বছরের পুরনো চাঁন্দমনি রক্ষাকালী মন্দির। চাঁন্দমনি কালী মন্দিরে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন দফায় হামলা করা হয়। উক্ত মন্দিরে চার ঘণ্টায় ৩ বার হামলা করা হয়। সেখানে সকাল ১১টার সময় প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারাধন চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (bdnews24.com) কে বলেন, 


‘‘প্রথম দফায় হামলার চেষ্টা হয়। তবে ফটক টপকে তারা ঢুকতে পারেনি। সাড়ে ১২টার দিকে আরেকবার হামলার চেষ্টা করে তারা। কিছুক্ষণ ঢিলাঢিলি করে চলে যায়। এরপর বেলা ৩টার দিকে তারা মই, হাতুড়ি, পেট্রোল নিয়ে চুড়ান্ত হামলা চালিয়ে সব ভেঙেচুড়ে, পুড়িয়ে চলে যায়।’’ 


চাঁন্দমনি কালী মন্দিরে মই দিয়ে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায় যে দীর্ঘ সময় ধরে ফোন করে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়নি। সেখানে চার ঘণ্টায়ও পুলিশ আসেনি। রাজ রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরে ও হামলা করা হয়। এতে দিলীপ কুমার দাস ইটের আঘাতে আহত হন। প্রথমে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতিতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ২১ অক্টোবর তার সেখানে মৃত্যু হয়।


ঘটনার সূত্রপাত


১৩ অক্টোবর ২০২১, বুধবার দূর্গাপূজা চলাকালিন সময়ে অষ্টমীর দিনে খুব ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়ারদীঘির পাশের একটি পূজামণ্ডপের বাইরে রাম-সীতা-লক্ষ্মণ-হনুমান মূর্তিরস্থলে হনুমান মূর্তির কোলের উপর একটি কুরআন দেখা যায়। বিষয়টি দেখার পর কেউ একজন বাংলাদেশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানালে কুমিল্লা কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে সেটি সরিয়ে ফেলে। কিন্তু ওই দিন সকাল ১০টা নাগাদ এর একটি ছবি ও ভিডিও ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, মূর্তির হাঁটুর কাছে কুরআন রয়েছে এবং হনুমান মূর্তির হাতে থাকা অস্ত্রটি (গদা) নেই। অনেকে বিষয়টি নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে কুরআন অবমাননার অভিযোগ করতে থাকেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে বিভিন্ন জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, মারধরের ঘটনা ঘটতে থাকে। পরবর্তীতে বাড়িঘর ভাঙচুর, আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে। পুলিশ তদন্তে জানা যায়, সেখানে কুরআন রেখেছিল ইকবাল হোসেন নামক এক ব্যক্তি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ঐদিন মধ্যরাতে নিকটবর্তী একটি মাজার থেকে কুরআন হাতে বের হয়ে তাকে পূজা মণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায় এবং শেষে হনুমানের হাতের অস্ত্রটি নিয়ে রাস্তায় ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়। যা দেখে ইকবাল হোসেনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। সংশ্লিষ্ট মামলায় পরবর্তিতে ৫০ জনের বেশি আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরবর্তীতে মৃত দীলিপ দাসের কন্যার আশংকাই সত্য হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ