ফরিদপুর অফিস, প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২৩ । ২১:০৭ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২৩ । ২১:২২
একমাত্র ছেলে প্রান্ত মিত্রকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ তার পুরো পরিবার। ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছে না প্রান্তর মা পুতুল মিত্র’র। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন,
‘আমার ছেলে মানুষের জন্য রক্ত দিতে গিয়েছিল। আর সেই রক্তের ঋণ এভাবে শোধ করল মানুষ?’
মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে বাসা থেকে বের হয়ে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স (বোটানি বিভাগ) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্রান্ত মিত্র (২৩)।
প্রান্তর নানা বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের মালাঙ্গা গ্রামে। বুধবার দুপুরে নানা বাড়ি গিয়ে দেখা মেলে প্রান্তর বাবা-মায়ের।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কিছুতেই কান্না থামছে না প্রান্তর মায়ের |
প্রান্তর স্কুলশিক্ষক বাবা বিকাশ মিত্র নিজেকে কিছুটা সামলে নিলেও তার স্ত্রীকে কোনোভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আঝোরে কাঁদছেন পুতুল মিত্র। ছেলে হারিয়ে নিঃস্ব এই মা কান্নাজড়িত কণ্ঠেই চাইলেন ছেলে হত্যার বিচার।
প্রান্তর বাবা বিকাশ মিত্র ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন,
আমি মনে করি, প্রান্তর সঙ্গে কারো বিরোধ থাকতে পারে না। সে জন্ম থেকেই আমার কাছ থেকে শিখেছে কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়, কীভাবে মানুষের উপকার করতে হয়। আমার ছেলের কোনো শত্রু থাকতে পারে, সেটা আমি ভাবতেই পারি না।
বিকাশ মিত্র আরও বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি, ওকে (প্রান্ত) হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তারা কারা, সেটা পুলিশই খুঁজে বের করুক। আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, বন্ধুর বোনকে রক্ত দিতে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাসা থেকে বের হন প্রান্ত। এর আধা ঘণ্টা পর শহরের আলীপুর সেতুর উত্তর পাশের সড়কের পাশ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের অম্বিকাপুর শ্বশানে প্রান্তর সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। প্রান্ত হত্যার নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা। ঘটনার পর থেকে প্রান্তর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও পলাতক রয়েছে।
প্রান্তর মেসো (খালু) অসিত বসু সমকালকে বলেন,
প্রান্ত অল্প বয়সেই রাজনৈতিকভাবে বেশ এগিয়ে গিয়েছিল। সে নেতাদের নজর কেড়েছিল, তাদের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হয়েছিল। এটাই হয়তো অনেকের সহ্য হয়নি। এটাও তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন,
প্রান্ত কয়েকজন নেতার এতটাই কাছে চলে গিয়েছিল, যে তাদের সান্নিধ্যে যেতে কারো অনুমতি লাগতো না। এ কারণেই সে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হয়ে পরে।
অসিত বসুর দাবি, এটি কোনোভাবেই ছিনতাইয়ের ঘটনা হতে পারে না। তাকে যেভাবে বুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে, তাতে যে কেউ বুঝতে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রান্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত সোমবার (২৪ জুলাই) ফরিদপুরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলেন শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জনি। প্রান্ত তার অনুসারী হিসেবে মিছিল নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে আলীপুরে শেখ রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনের সময় তার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি গ্রুপের মারামারির ঘটনা ঘটে।
এদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে সম্মেলনে যোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে এ সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। নতুন কমিটিতে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন ২৩ জন। তাদের মধ্যে পদ পাওয়া নিয়ে বিরোধ চলছিল। এরই মধ্যে সোমবার রাতে খুন হন প্রান্ত।
সূত্র: সমকাল
0 মন্তব্যসমূহ