নড়াইলে ‘কালিদাস বাবু’র নাম বদলে করা হয়েছে ‘লাল মিয়া’ পুকুর। মেয়রের বিরুদ্ধে পুকুর দখলের অভিযোগ

নড়াইলে ‘কালিদাস বাবু’র নাম বদলে করা হয়েছে ‘লাল মিয়া’ পুকুর। মেয়রের বিরুদ্ধে পুকুর দখলের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল, প্রকাশিত: ০০:৪৩, ১৩ মে ২০২৩


মেয়রের বিরুদ্ধে পুকুর দখলের অভিযোগ

খনন করা হচ্ছে ‘কালিদাস বাবু’র নাম বদল করে নাম রাখা ‘লাল মিয়া পুকুর’


‘বিউটিফিকেশন’ বা সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নড়াইল জেলা পরিষদের পুকুর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বদলে ফেলা হয়েছে পুকুরটির নামকরণও। ‘কালিদাস বাবু’র নাম বদলে করা হয়েছে ‘লাল মিয়া’ পুকুর! দখলসহ নামকরণ বদলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরার বিরুদ্ধে। ‘কালিদাস ট্যাঙ্ক’ নামকরণ বদলের ফলে সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব ফুটে উঠেছে। ভুক্তভোগী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘কালিদাস ট্যাঙ্ক’ পুকুরটি দখলমুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। তবুও মেশিন দিয়ে পুকুরটির বিভিন্ন অংশে ‘বিউটিফিকেশন’ কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। 


এদিকে কালিদাস ট্যাঙ্ক পুকুরটি দখলের বিষয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বোস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডক্টর লুৎফর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য খোকন কুমার সাহাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 


জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, ১৯০৭ সালে তৎকালীন জমিদাররা দুই একর ৫ শতক জায়গার ওপর পুকুরটি খনন করেন। নামকরণ করা হয়- ‘কালিদাস ট্যাঙ্ক’। পরে পুকুরটি জেলা পরিষদের অধীন হয়। এসব কাগজপত্র ও তথ্য-প্রমাণ জেলা পরিষদের কাছে রয়েছে। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই নড়াইল পৌর মেয়র বিউটিফিকেশনের নামে পুকুরটি দখল করেছেন। এ ছাড়া ‘কালিদাস ট্যাঙ্ক’ নামকরণ বদলে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ‘লাল মিয়া পুকুর বিউটিফিকেশন’ নাম দিয়েছেন। নড়াইল পৌর মেয়র নামকরণ বদলে ফেলার অধিকার রাখেন কি না? বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলা দায়েরসহ আইনগতভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে বলে জানান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। 


এদিকে বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, নড়াইল পৌর মেয়র ‘কালিদাস ট্যাঙ্ক’ নামকরণ বদলে হীন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব ফুটে উঠেছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নামে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন এলাকার নামকরণ বদলের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে ‘কালিদাস ট্যাঙ্কের নামকরণও বদলে ‘লাল মিয়া’ করা হয়েছে। এ নামকরণ বদলের প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন পেশার মানুষ।


অভিযোগ অস্বীকার করে পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুমান আরা বলেন, জমির (পুকুর) কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। খাজনাও নিয়মিত দিয়ে আসছি। উনি (জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) যে অভিযোগ করেছেন, তা ঠিক নয়। পুকুরটি গভীরকরণ, হাঁটাপথ, বসার ব্যবস্থা, আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করেছে। ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ই সমাধান করবে।


সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. নামটা পরিবর্তন হচ্ছে না বললেন নড়াইলের মেয়র। বিস্তারিত খবর প্রথম আলো পত্রিকা থেকে পড়তে পারেন----

    নড়াইলের মেয়র বললেন, ‘পুকুরটির নাম কালিদাস ট্যাংক আছে, এটাই থাকবে’
    মাসুদ আলম, যশোর
    আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১৯: ১৭

    ঐতিহ্যবাহী ‘কালিদাস ট্যাংক’ পুকুরের নাম পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কের মধ্যে নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেছেন, পুকুরটির নাম পরিবর্তন করা হয়নি। নাম কালিদাস ট্যাংক আছে, এটাই থাকবে। রোববার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে এ কথা বলেন।

    গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলা এলাকার এ পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ফলকে লেখা ছিল, ‘লাল মিয়া পুকুর বিউটিফিকেশন নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তরের শুভ উদ্বোধন’।

    পুকুরটির নামের পরিবর্তন দেখে এলাকার সচেতন নাগরিকেরা এর প্রতিবাদ করেন। উদ্বোধনের পর দীর্ঘদিন পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়নি। সস্প্রতি কাজ শুরু হলে পুকুরটির নাম পরিবর্তন নিয়ে আবারও প্রতিবাদ শুরু হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

    মেয়র আঞ্জুমান আরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুকুরটি সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয় তখন এর নাম “কালিদাস ট্যাংক” ছিল। কিন্তু একজন বরেণ্য ব্যক্তির নাম না থাকায় প্রকল্পটি পাস হয়নি। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ডাকনাম লাল মিয়া। পরে প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে “লাল মিয়া পন্ড অ্যান্ড কালিদাস ট্যাংক বিউটিফিকেশন প্রকল্প” রাখা হয়। প্রকল্পটি পাসের পর তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয়। মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা পুকুরটির বিউটিফিকেশন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে করতে গিয়ে উদ্বোধনী নামফলকে ভুল করে “লাল মিয়া পুকুর বিউটিফিকেশন” লেখা হয়েছে। এতে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নামফলকটি পরিবর্তন করে দিতে বলেছি। ১৫ দিন আগে পুকুরটির খনন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে পুকুরটির নাম “কালিদাস ট্যাংক” করা হবে।’

    নড়াইল পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌরসভার মহিষখোলা মৌজার ৫২৮ নম্বর দাগে পুকুরটির অবস্থান। পুকুরটির আয়তন ২ একর ৫ শতক। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় ৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পুকুরটি সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নড়াইল জেলা কমিটির সভাপতি এস এ মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে পুকুরটির নাম “কালিদাস ট‍্যাংক”। সেটা পরিবর্তনের করা যাবে না। এটির নাম “লাল মিয়া পুকুর” করায় আমরা প্রতিবাদ করেছি। কয়েক দিন আগে পৌর মেয়রের সঙ্গে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। এতে ঐকমত্য হয়েছে। পুকুরটি খনন শেষে “কালিদাস ট‍্যাংক” নামই থাকবে।’

    পুকুরটির নাম পরিবর্তন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নড়াইল জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এবং নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মলয় কুমার কুণ্ডু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদ করে আসছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর আবার পুকুরটির নাম “কালিদাস ট‍্যাংক” করা হবে বলে পৌর মেয়র আমাদের জানিয়েছেন। এর ব্যত্যয় হলে আমরা তা মেনে নেব না।’

    মলয় কুমার কুণ্ডু আরও বলেন, এলাকার মানুষ আগে চিত্রা নদীর পানি পান করত। সুপেয় পানির জন্য নড়াইলের জমিদার কালিদাস রায়ের দুই ছেলে পুকুরটি খনন করেন। কালিদাস রায়ের নামে পুকুরটির নাম রাখা হয় ‘কালিদাস ট‍্যাংক’।

    https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/5i7f9ngszs

    উত্তরমুছুন